Skip to main content

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস

শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া, জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৬৮ বছর। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাজপথে ছিলেন সদা সোচ্চার। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ধর্মঘটে তিনি ও কয়েকজন সহকর্মীসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রণিধানযোগ্য।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।১৯৬২ সালে তৎকালীন আইয়ুব খান সরকার কর্তৃক গঠিত শরিফ কমিশন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের অনুকূলে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। সেই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণআন্দোলন ও গণজাগরণ তৈরি করে। সেই বাষট্টির রক্তঝরা দিনগুলোতে রক্ত ঝরেছে অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর।

১৯৬৬ সালে বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সনদ ছয় দফা বাস্তবায়নে শেখ মুজিবুর রহমান আস্থা রেখেছিলেন তরুণ ছাত্রনেতাদের ওপর। তিনি সে সময়কার ছাত্রনেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জেলায় জেলায় অবস্থান সুদৃঢ় করে ছয় দফার সপক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সারা বাংলার মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৬ দফা দাবির গুরুত্ব তুলে ধরেন।

১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল রাজপথের প্রমিথিউস। ছয় দফা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিভেদ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের বৈঠকের বাইরে কঠোর পাহারা বসাতে হয়েছিল ছাত্রলীগের কর্মীদেরই।
১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুস জয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ পথচলায় ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার সহস্র্রাধিক নেতাকর্মীকে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। ২৩ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ তাই তো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রাণের সংগঠনের ১৭ হাজার বীর যোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম মানচিত্র। সেসব বীর যোদ্ধাই আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের সাহস।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে আছে তরুণ মুজিবের নান্দনিকতা ও আদর্শ, আছে কাজী নজরুলের বাঁধ ভাঙার শৌর্য, আছে ক্ষুদিরামের প্রত্যয়, আছে সুকান্তের অবিচল চেতনা। তাই তো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থ সুরক্ষায় সবসময় মঙ্গলপ্রদীপের আলোকবর্তিকা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চার দিগন্তে।

যখন বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল, ঠিক তখনই বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটিকে নিভিয়ে দিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হিংস্র হায়েনারা আঘাত হানে। প্রত্যক্ষ মদদ দিলেন খন্দকার মোশতাক আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ যে কালো মেঘ গ্রাস করেছিল, সেই মেঘ সরাতে প্রত্যাশার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালে প্রত্যাবর্তন করলেন আমাদের প্রাণের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সেদিন প্রিয় নেত্রীর পাশে ভ্যানগার্ডের ভূমিকায় ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮৩ সালে শিক্ষা আন্দোলন ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ১০ দফা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষার অধিকার প্রসারে শামসুল হক ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর কমিশনের রিপোর্ট তৈরিতে ছাত্র সমাজের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।

১৬ কোটি বাঙালির প্রাণের স্পন্দন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুনিপুণ কারিগর, বিশ্বজয়ী নেত্রী, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত, নারীমুক্তির পথপ্রদর্শক দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় পালন করেছে অগ্রণী ভূমিকা। সে সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিনে তিনবেলা নিজ হাতে রুটি তৈরি করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সারারাত জেগে প্রস্তুত করেছেন খাবার স্যালাইন। সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের বন্যাসহ সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একই কার্যক্রম নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ছাত্রলীগ।

২০০২ সালের ২৩ জুলাই বিএনপির পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রদলের ক্যাডাররা গভীর রাতে শামসুন্নাহার হলে ঢুকে ছাত্রীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। ছাত্রলীগ সেদিন শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানির হাত থেকে রক্ষা করে ও দোষীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিতর্কিত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আটক আমাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে প্রথম সাহসী উচ্চারণ তুলেছিল বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগের কর্মীরাই।বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজী নজরুলের কবিতার মতোই ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী; আর হাতে রণ তূর্য।’ আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ পাঠদান কর্মসূচি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের চর্চা।

১৯৭৩ সালের ৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও বাংলা সোনার বাংলা হবে না, যদি বাংলাদেশের ছেলে আপনারা সোনার বাংলার সোনার মানুষ পয়দা করতে না পারেন।’ তাই তো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর ব্রত সোনার মানুষ হওয়ার।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সোনালি অতীতের মতো সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়বে। আর সে জন্যই দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে সর্বোচ্চ অবদান রাখছেন। ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে প্রযুক্তি দক্ষ ছাত্রসমাজ তৈরিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে ও করবে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ১৯ দফা দাবি পেশ করেছে। ভবিষ্যতেও ছাত্রলীগ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষাসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাকল্পে কাজ করবে।

নবীনদের মেধা দেশ গড়ার কাজে লাগুক, স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিধৌত হোক নতুন প্রজন্মের বিবেক ও চেতনা। অনাগত প্রজন্মের লড়াই হোক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে, সব অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে, দেশগড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

Comments

Popular posts from this blog

Google I/O 2025: What to Expect - AI, Android, Pixel & Beyond!

Google I/O 2025: Peering into the Future – AI, Android 16, Pixel & Beyond! Google I/O 2025: What to Expect - AI, Android, Pixel & Beyond! The tech world thrives on anticipation, and few events stir up quite as much excitement as Google I/O. While the dust may have just settled (or is about to settle) on I/O 2024, true tech aficionados are already casting their gazes further, towards  Google I/O 2025 . This annual developer conference is Google’s prime stage to unveil its latest software breakthroughs, hardware innovations, and the overarching vision for its vast ecosystem. So, grab your virtual crystal ball as we dive deep into what Google might have in store for us at  Google I/O 2025 . This is pure speculation, of course, based on current trends, Google’s trajectory, and a healthy dose of informed guesswork. But isn’t that half the fun? What Exactly IS Google I/O? A Quick Refresher For the uninitiated, Google I/O (Input/Output) is more than just a series ...

The Untold Story: Why Did the Canadian Prime Minister's Family Break Up?

The Untold Story: Why Did the Canadian Prime Minister's Family Break Up? Discover the untold story behind the breakup of the Canadian Prime Minister's family in this intriguing article. Uncover the reasons and secrets that led to their separation. The breakup of the Canadian Prime Minister's family has been a topic of intrigue and speculation. In this article, we delve into the untold story behind their separation, uncovering the reasons and secrets that led to the end of their relationship. Introduction to the Canadian Prime Minister's family. The Canadian Prime Minister's family has always been in the spotlight, with their every move and decision scrutinized by the public. However, behind the scenes, there were hidden tensions and conflicts that eventually led to their breakup. In this article, we will provide an introduction to the Prime Minister's family, shedding light on their dynamics and the events that ultimately led to their separation. Sig...

Using ChatGPT: Unlocking the Power of AI for Blog Content Creation

Using ChatGPT: Unlocking the Power of AI for Blog Content Creation In today's digital era, content creation has become an integral part of online presence for businesses, bloggers, and content creators. While generating fresh and engaging content is essential for success, it can be time-consuming and challenging to consistently come up with new ideas. However, the advent of artificial intelligence has opened up exciting possibilities for easing the content creation process. One such groundbreaking tool is ChatGPT, a powerful language model developed by OpenAI. In this blog post, we will explore how ChatGPT can be a valuable and innovative tool for content creators, revolutionizing the way we generate blog content. 1. AI-Driven Article Titles: Bloggers and content creators often struggle with crafting attention-grabbing article titles. ChatGPT can be fine-tuned on datasets of article titles to generate new and compelling titles. This AI-powered assistance not only saves ...