বদলে যাওয়ার গল্প : Story of change - Durbar Bagerhat
আগামী ২৬ এপ্রিল ২০২২ সারাদেশে ওসমানের মতো প্রায় ৩৩ হাজার পরিবার পাচ্ছে তাদের ঈদ উপহার দুই শতক জমিসহ দুইকক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর। জয় বাংলা। জয়তু শেখ হাসিনা।
বদলে যাওয়ার গল্প: (১)
নাম- ওসমান গনি, স্ত্রী- ফিরোজা বেগম
বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ওসমান গণি। পিতা মৃত ইব্রাহিম শেখ। বাবা গোবিন্দপুর গ্রামে পরের জমিতে থেকে ডালা বুনতেন। ছোট বেলায় তিন ভাই বোনের সংসার চালাতে বাবার খুব কষ্ট হত। ১০ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর জীবন হয়ে পড়ে আরো দু্র্বিষহ। আজ এক বাড়ী তো কাল অন্য বাড়ি থাকতে হত। নিরূপায় হয়ে চট্টগ্রাম চলে যায় জীবনের সাথে সংগ্রম করতে করতে। ফুটপাতে ঘুমাত। মাঝে মাঝে মাছ ধরত। চট্টগ্রামে দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে আবার নাড়ীর টানে তার জন্মস্থানে চলে আসে। বিয়ে করে উত্তর খানপুরে বসবাসরত কাছেম মোল্লার মেয়ে ফিরোজাকে। শ্বশুরেরও কোন জায়গা জমি ছিল না। দরিদ্র পরিবারে বিয়ে করে কোথাও থাকার মত জমি নাই। জৌখালী নদীর পাড়ে ঘর বেধে থাকত আর নদীতে মাছ ধরে কোন রকম জীবন চালাতে থাকে। বছর খানের আগে লোকমুখে শুনতে পারে যে মানানীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের জমিসহ ঘর প্রদান করছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ভূমিহীন তালিকাভুক্ত হয়ে এই রমজানে দুই শতক জমিসহ ঘর বুঝে পান। খানপুর ইউনিয়নের চূড়ামণি মৌজায় ৫৩টি ঘরের মধ্যে লটারির মাধ্যমে পিসঢালা রাস্তার পাশের ০১ নম্বর ঘরটির মালিক এখন ওসমান। ঘর বুঝে পাওয়ার পরে অশ্রুসিক্ত ওসমানের বক্তব্য এমন-“জীবনে স্বপ্নেও ভাবিনি যে পাাক ঘর বানাতে পারব। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমি বিনা পয়সায় বাস্তার পাশে জায়গাসহ বিল্ডিং ঘর পেলাম। আমি এখন ঘরে বসবাস করতেছি সামনে রোজার ঈদ, এই ঈদে পরিবার পরিজন নিয়ে নতুন ঘরে ঈদের আনন্দ করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমরা অন্তর থেকে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁকে নেক হায়াত দান করেন।”
বদলে যাওয়ার গল্প: (২)
নাম- শাহাজান মীর, স্ত্রী- আফরোজা
বাগেরহাট সদরের খানপুর ইউনিয়নের বৃদ্ধা আফরোজা বেগম। শিশু বয়সেই বাবা-মাকে হারান। এত অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যায় যে ঠিক মতো বাবা-মায়ের চেহারাও স্মরণ করতে পারেন না। শিশু বয়স থেকেই এতিম আফরোজা চাচা ও প্রতিবেশীর বাড়িতে থেকে থেকে মানুষ। আজ এ বাড়ি তো কাল অন্যের বাড়িতে কাজ করে করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। গ্রামের লোকজন মিলে এতিম আফরোজে বিয়ে দিয়ে দেয় স্থানীয় শাহাজান মীরের সাথে। শাহাজান মীর পেশায় ভ্যান চালক। থাকেন সারকারী খাল পাড়ে। সেই খালপাড়ে ভ্যান চালক স্বামীর সংসারেই দিনে এনে দিনে খেয়ে দীর্ঘ বছর পাড়ি দেয় আফরোজার সংসারে একে একে চারটি সন্তান যার দুটি সন্তানই প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী দুই সন্তানতে নিয়ে আফরোজা আর তার স্বামী শাহাজানের নিদারূণ কষ্টের সংসার দীর্ঘ বছরের ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছে। অবশেষে এই শেষ জীবনের এসে জমিসহ পাকা ঘরের মালিক হয়েছেন আফরোজা। আগামী ২৬ তারিখে তিনি তার নতুন ঘরের দলিল ও খতিয়ান হাতে পাবেন। প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে শেষ জীবনের হলেও একটু সাচ্ছন্দে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। পবিত্র রমজান মাসে ঈদুল ফিতরের পূর্বমুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আফরোজার স্বগতোক্তি- ‘রমজান মাসে আমরা দু হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয় করি যে তিনি যেন দীর্ঘজীবী হন এবং দেশের আরও অনেক উন্নতি করতে পারেন’। আগামী ২৬ এপ্রিল সারাদেশে আফরোজাদের মতো প্রায় ৩৩ হাজার পরিবার পাচ্ছে তাদের ঈদ উপহার দুই শতক জমিসহ দুইকক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর।
জয় বাংলা। জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখক- মো. মোছাব্বেরুল ইসলাম,
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাগেরহাট সদর।
Comments