দীর্ঘ দিন থেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সম্প্রতি সেই সংক্রমণ আরো বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে তিন দশক ধরে তার সঙ্গী আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। এমনকি দীর্ঘদিন থেকে তার লিভার ও কিডনিও প্রায় বিকল। তারমধ্যে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়ায় রাজনীতির বিষয়ে সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপির দায়িত্ব কে নেবেন, তা নিয়ে ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে দ্বন্দ্ব। তবে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখার একটি কর্মপরিকল্পনা দিয়েছে সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।
গত অক্টোবর মাসেই গণ অধিকার পরিষদ নামে একটি দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল নুরুল হক নুর ও গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। এরপর থেকে সরকারবিরোধী দূর্বল দলগুলো থেকে নেতাকর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করছে তারা। এরমধ্যেই জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার বক্তব্য উঠে খালেদা জিয়ার ক্যান্সার ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কথা। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন নুর ও কিবরিয়া। খালেদার অবর্তমানে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দলটির নেতৃত্বে আসার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন তারা।
বিএনপির প্রেস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গণ অধিকার পরিষদের নেতারা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তবে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি দেখা করেননি। কিন্তু তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে আলোচনা করেছেন ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ।
তিনি আরো জানান, বিএনপি যেহেতু একসময় ক্ষমতায় ছিল, তাই সারাদেশে এই দলের নেতাকর্মী আছে। নুর ও রেজা কিবরিয়ার পক্ষ থেকে তাই এই নেতাকর্মীদের কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান যেহেতু খুন ও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত, তাই তিনি পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আবার দীর্ঘদিন দেশে না থাকার কারণে রাজনীতিতেও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও গত এক এক দশক ধরে মাঠে নেই। কিন্তু ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে মাঠে সক্রিয় থাকার কারণে সারাদেশে নুরের একটা পরিচিতি হয়েছে। অন্যদিকে গণফোরামের মতো একটা দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে থাকার অভিজ্ঞতা আছে রেজা কিবরিয়ার। তাই কৌশলগত কারণে তাদের হাতে বিএনপিকে ছেড়ে দিলে, আগামী নির্বাচনে তারা বিএনপিকে জিতিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপর বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করার কথাও স্পষ্টভাবে বলেছেন নুর ও রেজা।
নুরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রেজা কিবরিয়া একজন অক্সফোর্ড পড়ুয়া অর্থনীতিবিদ। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতো দুর্নীতি ও খুনখারাপির কোনো অভিযোগ নাই তার বিরুদ্ধে। এমনকি প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের সংস্থার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিএনপি থেকে তাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে। ফলে আগামী নির্বাচনে জেতা সহজ হবে। এরপর বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেওয়া হবে রাষ্ট্রপতির পদ। সরকার গঠনের পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে তাকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং তার পরামর্শ নিয়েই সরকার পরিচালনা করা হবে।
নুর ও রেজার সঙ্গে এসব বিষয়ে প্রায় আধাঘণ্টা আলোচনা হয়েছে খালেদা জিয়ার। তাদের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে সহমত পোষণ করেছেন তিনি। তবে তিনি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তারপর আবারো তাদের সঙ্গে আলাপের কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপাসন। কিন্তু পরেরদিন তিনি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লে, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই মাসের শুরুতে প্রায় দুই সপ্তাহ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা খারাপ। এরমধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিএনপির ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তিত তিনি। এসব কারণে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
#BNP #NUR #Kibria #BkashNura #Nurachora
Comments