২০২০ সালের শুরুর দিকে চীনের উহান শহর থেকে এই মহামারী ছড়িয়েছিল। কোভিড প্রতিরোধী বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন ও মুখে খাওয়ার বড়ি ইতোমধ্যেই আবিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এতে করে এই প্রাণঘাতি রোগ থেকে নিরাময় পাওয়ার নিশ্চিয়তা এখনও দিতে পারছেন না চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- কয়েকমাস পর পরই রোগটি নতুন রূপে ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যাকে বলা হচ্ছে কোভিডের নতুন ঢেউ।
রূপ ও বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে কয়েকমাস পর পরই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ও ধ্বংসযজ্ঞতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। এই মহামারী দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা যে আভাস দিয়েছিলেন রোগটির আচরণ ও বৈশিষ্ট্য তারই প্রমাণ দিচ্ছে।
গত দুই বছরে সারা বিশ্বে দুই দফায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটনার পর কিছুটা কমে এসেছিল সংক্রমণ ও প্রাণহানির মাত্রা। কিন্তু ২০২১ সালের নভেম্বরে এসে ভারত ও ইউরোপে আবারও নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে।
সংক্রমণ রোধে সারাবিশ্বে একের পর এক লকডাউন দেওয়ার পর সেই পরিস্থিতিরও অবসান ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা আপাতত মাস্ক পরিধান করে পর্যাপ্ত সতর্কতা বজায় রেখে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই মত দিচ্ছেন।
কিন্তু বিপত্তি ঘটছে মাস্ক ব্যবহারে সঠিক নিয়ম পরিপালন নিয়ে। এমনকি অনেক উচ্চ শিক্ষিত ও সচেতন ব্যক্তিকেও মাস্কের সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া নিয়মগুলো ভুল বশতঃ লংঘন করে বসতে দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন- মাস্ক নির্বাচন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মের ব্যত্যয় একজন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নিয়মিত সতর্ক বার্তায় বলা হচ্ছে- যেকোনো ব্যক্তি যখন জনসমাগমে যাবেন, তিনি যেন অবশ্যই সতর্কতামূলকভাবে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরিধান করে থাকেন। এতে করে তিনি নিজে যেমন আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবেন, আবার তার শনাক্তহীনভাবে কোভিড-১৯ এর ভাইরাস থাকলে তা অন্যকে ঝুঁকিতে ফেলার আশঙ্কা কমাবে।
মাস্ক ব্যবহারের নিয়মগুলো
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই মাস্ক ব্যবহারের বেশ কিছু নিয়ম পদ্ধতিতে বলে দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো:
১. পরিধানের জন্য মাস্ক স্পর্শ করার আগে হাত ভালোভাবে জীবানুমুক্ত বা সেনিটাইজ করে নিতে হবে। এরপর মাস্কটি নাক ও মুখের মধ্যে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন এর কোনো অংশ দিয়ে সরাসরি বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। অর্থাৎ কেবল মাস্কে ফিল্টার হয়েই যেন বাতাস শ্বাসতন্ত্রে যায়।
২. কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাস্ক মুখ থেকে খুলে গলায় ঝুলিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর আবার সেই মাস্ক পরিধান করলে এতে সুরক্ষার সম্ভবনা কমে যায়, আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। মাস্ক নাক থেকে সরিয়ে কেবল মুখের ওপর দিয়ে রাখলেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
৩. মাস্ক পরিধান করে থাকা অবস্থায় মাস্কের ওপর দিয়ে বার বার হাতের স্পর্শ একে অনিরাপদ করে তুলতে পারে। তাই কোনোভাবেই মাস্কের উপরিভাবে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবেনা।
৪. ব্যবহার শেষে বা লোকালয় থেকে ঘরের নিরাপদ জায়গায় ফেরার পর মাস্ক খুলতে চাইলে সবার আগে হাত জীবানুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ সেনিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে অথবা সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে পরিষ্কার পানিতে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এর পর মাস্কের কাপড়ে হাতের স্পর্শ না করে কেবল হাতল বা কানের সঙ্গে বেঁধে রাখা রশি ধরে খুলতে হবে।
মাস্ক সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে-
একজন সুস্থ মানুষ যখন বাড়িতে কোনো কোভিড সন্দেহভাজন অথবা কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত থাকবেন, তাকে মাস্ক পরতে হবে।
কারও জ্বর, সর্দি-কাশি থাকলে তার মাস্ক পরা উচিত।
মাস্ক পরা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ব্যবহার শেষে সেই মাস্ক যথাযথ নিয়মে ধ্বংস করাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যবহৃত মাস্ক অন্যের সংস্পর্শে এসে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মাস্ক পরার শুরু করার আগে অবশ্যই হ্যান্ড সেনিটাইজার বা সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
মাস্ক দিয়ে নাকমুখ এমনভাবে আবদ্ধ করতে হবে যেন সরাসরি কোনো বাতাশ ঢুকতে না পারে। কেবল মাস্কের মাধ্যমে ফিল্টার হয়েই যেন বাতাস শ্বাসনালীতে যায়।
মুখে পরিধান অবস্থায় থাকা মাস্ক হাত দিয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কখনও ভুলে সেই মাস্কে হাত লেগে যায় তাহলে সাথে সাথে হাত সাবান অথবা অন্যকোনো কার্যকর সেনিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
একবার ব্যবহারযোগ মাস্ক কোনোভাবে দুইবার ব্যবহার করলে সুরক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট হবে। ব্যবহারের পর ওই মাস্ক ধ্বংস করার বিষয়টি ব্যবহারকারী নিজে বা তার সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি নিশ্চিত করবেন।
আরও যা জানতে হবে
বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক থাকলেও সবগুলোর সুরক্ষার ক্ষমতা একই ধরনের নয়। তাই দেখে শুনে মানসম্মত মাস্ক বেছে নেওয়াই নিরাপদ।দুই বা তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের যেসব মাস্ক রয়েছে সেগুলো ধুয়েও ব্যবহার করা যায়।একটি ব্যবহৃত মাস্কে করোনাভাইরাসের জীবানুর উপস্থিতি থাকা খুবই স্বাভাবিক। তাই ব্যবহারের ওই মাস্ক যেখানে সেখানে ফেলে না রেখে নির্দিষ্ট ঝুঁড়িতে ফেলতে হবে। অথবা যেকোনো ভাবে ওই মাস্কের ধ্বংস নিশ্চিত করতে হবে।মুখে পরা অবস্থায় থাকা মাস্কে বারবার হাত দেওয়ার অর্থই হচ্ছে কোনো কারণে সেই মাস্ক ভাইরাসের জীবানু প্রতিরোধ করতে পারলেও সেই জীবানু হাতে চলে আসা। তাই যতটা সম্ভব মাস্কের বাইরের অংশ স্পষ্ট করা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।একজনের ব্যবহৃত মাস্ক কোনোভাবেই যেন অন্য আরেকজন ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।মাস্ক পকেটে রেখে দেওয়া কিংবা কথা বলার সুবিধার্থে টেবিলের ওপরে রাখাও সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
Learn more: Corona info
, বাগেরহাট, আওয়ামী লীগ, সম্প্রীতি সমাবেশ, শান্তি মিছিল,
durbarbagerhat
Comments